একটানা শাঁখ বাজিয়ে রেকর্ড গড়ার পথে কলেজ ছাত্র

15th January 2020 বাঁকুড়া
একটানা শাঁখ বাজিয়ে রেকর্ড গড়ার পথে কলেজ ছাত্র


 একটানা দীর্ঘ সময় শাঁখ বাজিয়ে বিশ্ব রেকর্ডের দোরগোড়ায় এক বঙ্গ সন্তান। কিন্তু উপযুক্ত যোগাযোগ না থাকায় দোরগোড়ায় পৌঁছেও নিয়মের বেড়াজালে আটকে আছেন বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির হাড়িভাঙ্গা গ্রামের বছর কুড়ির অসীম মাজি। বর্তমানে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফাইন্যাল ইয়ারের ছাত্র অসীম একটানা এক ঘন্টারও বেশী সময় শাঁখ বাজাতে পারেন। সেকেণ্ডের হিসেবে যা ৪০২৮ সেকেণ্ড। ইতিমধ্যে বিহারের এক যুবকের এবিষয়ে রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছেন তিনি।

 বাঁকুড়ার অসীম মাজির এই 'জার্নি'টা খুব সহজ ছিলনা। অসংখ্যবার নানান বাধা এসেছে, হয়েছেন অপমানিত। তবুও অধ্যাবসায় ও মানসিক দৃঢ়তার জেরে বারবার নিজের তৈরী রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গে চলেছেন। এই মুহূর্তে সে একটানা ১ ঘন্টা ৭ মিনিট ৮ সেকেণ্ড শাঁখ বাজাতে পারে। কয়েক মাস আগেই 'লিমকা বুক অব ওয়ার্ল্ডে' এবিষয়ে আবেদন করেছে সে। যদিও লিমকা কর্ত্তৃপক্ষের তরফে এখনো কোন সদূত্তর মেলেনি। 

 কেমন ছিল শাঁখ বাজানো নিয়ে অসীম মাজির এই 'জার্নি'টা?   বাড়িতে কোন শাঁখ ছিলনা। বয়স তখন ১১। দাদা সুষেন মাজি বন্ধুদের সঙ্গে দীঘা বেড়াতে গিয়ে একটি শাঁখ কিনে আনেন। মা রোজ সন্ধ্যারতীর সময় সেই শাঁখ বাজাতেন। সেই বয়সে কোন কিছু না বুঝেই মনের আনন্দে মায়ের হাত থেকে সেই শাঁখ নিয়ে বাজাতে থাকে সে। এভাবেই পথ চলা শুরু। এখনো বাড়িতে থাকলে সে সন্ধ্যারতীর সময় শাঁখ বাজায়।  বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ অনুশীলনের জেরে বেড়েছে একটানা শাঁখ বাজানোর সময়সীমাও। একটা সময় এলাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতায় শঙ্খধ্বনী প্রতিযোগীতায় প্রথম পুরস্কার ছিল তার বাঁধা। সেখানেও জুটেছে অপমান। মামাবাড়িতে এইরকমই এক প্রতিযোগীতায় বিচারকরা অন্যায়ভাবে তাকে বের করে দেন দাবী করে সে বলে, ওদের মনে হয়েছিল আমি 'চিটিং' করছি। এভাবে দীর্ঘক্ষণ কেউ শাঁখ বাজাতে পারেনা। সেদিনই বাবা মায়ের পা ধরে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম একদিন 'শাঁখ বাজিয়েই বিশ্বরেকর্ড করবো'। তার অকপট স্বীকারোক্তি। যে যাই বলুক, যতোই বাধা আসুক একান্নবর্ত্তী পরিবারে মানুষ হওয়া অসীমের এই কাজে বরাবর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বাবা ভৈরব মাজি ও মা সুভদ্রা মাজি। 


 যদিও কলেজ জীবনে পৌঁছেও হোস্টেলে থাকাকালীন শাঁখ বাজানোকে কেন্দ্র করে 'অপমান' তার পিছু ছাড়েনি।  অসীমের দীর্ঘক্ষণ শাঁখ বাজানোর জেরে নাকি বন্ধুদের একাংশের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটছে। কিন্তু কোন কিছুতেই পিছিয়ে আসতে রাজী নয় এই হবু ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। হোস্টেল থেকে এক কিলোমিটার দূরে ফাঁকা মাঠে গিয়ে চালিয়ে গেছে নিয়মিত অনুশীলন। অবশেষে এক বছর আগে বাবা মায়ের সামনে ১ ঘন্টা ৭ মিনিট ৮ সেকেণ্ড একটানা শাঁখ বাজিয়ে বিশ্বরেকর্ড করে ফেলে সে। যদিও সরকারীভাবে তা নথিভূক্ত নয়। তবুও বাবা মায়ের পা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা সে রাখতে পেরেছে এতেই খুশি এই তরুণ শঙ্খবাজিয়ে।

 সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, এখনো পর্যন্ত ৩০৬৩ সেকেণ্ড শাঁখ বাজিয়ে সরকারীভাবে বিশ্বরেকর্ড করেছেন বিহারের বেগুসরাইয়ের শম্ভু কুমার। ২০১৬ সালের ১০ জুলাই যখন তিনি এই রেকর্ড করেন তখন তাঁর বয়স ৩০ এর উপরে। আর বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির প্রত্যন্ত গ্রামের এই অসীম মাজি মাত্র ২০ বছর বয়সেই অবলীলায় বাজিয়ে ফেলেন ৪০২৮ সেকেণ্ড। সুযোগ পেলে অসীম মাজি যে শম্ভূ কুমারের এবিষয়ে রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এখন দেখার সব বাধা কাটিয়ে,  সেই স্মরণীয় মুহূর্ত কবে আসে, যা দেখার অপেক্ষায় অসীম নিজে, তার বাবা-মা, পরিবারের সকলের সঙ্গে আমরাও।

                ছবি - দেবব্রত মন্ডল





Others News

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : তোপধ্বনি তে কেঁপে উঠল বিষ্ণুপুর । শুরু হল মল্ল রাজাদের ১০২৫ বছরের অষ্টমী পূজোর সন্ধিক্ষণ।

প্রাচীণ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও নিষ্ঠাভরে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে দেবী দুর্গা 'মৃন্ময়ী নামে পূজিতা হন। জানা গিয়েছে, পূর্ব প্রথা মতোই প্রাচীণ রীতি মেনে মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে কামান দাগার মধ্য দিয়ে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে শুরু হয়ে গেল 'বড় ঠাকরুনে'র পুজো। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শক সাধারণের উপস্থিতি ছিল বাঁধভাঙ্গা। সরকারী নিয়মকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে দেবী বন্দনা। এমনকি এখানে কামান দাগার পর্বেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে অল্প সংখ্যক লোককে নিয়ে ঐ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

শুরুর সময় থেকে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করা হয় বড় কামানের গর্জনের শব্দে। যার আওয়াজে রাজবাড়িতে আরতি নৃত্যও শুরু হয়ে যায়।